‘কেওট’ শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। বাংলা সাহিত্যে, লোককথায় কিংবা লোকসংস্কৃতিতে ‘কেওট’ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ‘কেওট’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ কী, বা কারা এই নামে পরিচিত, তা কি আমরা জানি? আজকের এই পোস্টে আমরা জানব ‘কেওট’ শব্দটির অর্থ, ব্যবহার, এবং এর সাথে সম্পর্কিত নানান তথ্য।
কেওট শব্দের অর্থ কি?
বাংলায় ‘কেওট’ শব্দটি দিয়ে মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী একটি সম্প্রদায়কে বোঝায়। ঐতিহ্যগতভাবে কেওট সম্প্রদায়ের মানুষেরা মৎস্যজীবী এবং নৌকা চালনায় তাদের নৈপুণ্যের জন্য খ্যাত ।
কেওট শব্দের উৎপত্তি
‘কেওট’ শব্দটি সংস্কৃত ‘কৈবর্ত’ শব্দ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে কৈবর্তরা ছিলেন এক রাজন্যবর্গ, কিন্তু কালক্রমে তারা মৎস্যজীবী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে।
ধ্বনিগত পরিবর্তনের ধারা:
- কৈবর্ত
- কেবট্ট
- কেবট
- কেওট
কেওট শব্দের সমার্থক শব্দ
কেওট শব্দের কিছু সমার্থক শব্দ হল:
- ধীবর
- মৎস্যজীবী
- জেলে
- মাঝি
কেওট শব্দের ব্যবহার
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ‘কেওট’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।
- সাহিত্যে: বিভিন্ন কবিতা, গান, ছড়া ও গল্পে কেওট চরিত্রের উল্লেখ আছে। উদাহরণস্বরূপ, সৈয়দ আলাওলের ‘কেওট নৌকা বাইয়া যায়’ গানটি ।
- লোকসংস্কৃতিতে: বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে লোকসংগীতে, লোকনাট্যে ‘কেওট’ চরিত্রের বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট ।
কেওট শব্দ সম্পর্কিত প্রবাদ-প্রবচন
কেওট শব্দ সম্পর্কিত কিছু প্রবাদ-প্রবচন রয়েছে যা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
- কেওটের পো খাইয়া ডুব দিল ।
এই প্রবাদটি বোঝায় যে অন্যের সম্পত্তি লোভে পড়ে ধ্বংসের মুখে পতিত হওয়া।
উপসংহার
‘কেওট’ শব্দটি শুধুমাত্র একটি পেশাগত গোষ্ঠীকে না বুঝিয়ে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমাদের সম্মান বোধ থেকে এসব ঐতিহ্যবাহী শব্দ ও তার পেছনের ইতিহাস জানা ও বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।