“কিম্পুরুষ” – শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অদ্ভুতদর্শন প্রাণীর ছবি। অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক ঘোড়া – রূপকথার পাতা থেকে যেন বেরিয়ে আসা! কিন্তু এই শব্দটির ব্যবহার কি শুধুই পৌরাণিক গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? আসলে কিনা তা নয়। আজ আমরা জেনে নেব “কিম্পুরুষ” শব্দটির সঠিক অর্থ, এর ব্যবহার এবং এর সাথে জড়িত কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
কিম্পুরুষ শব্দের অর্থ
“কিম্পুরুষ” শব্দটির দুটি ভিন্ন অর্থ পাওয়া যায়:
- পৌরাণিক অর্থ: প্রাচীন ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত এক ধরণের অলৌকিক প্রাণী যারা স্বর্গীয় গায়ক হিসেবে পরিচিত ছিল। এদের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের জন্য দেবতারাও মুগ্ধ হতেন বলে কথিত আছে। কিম্পুরুষদের দেহের উপরিভাগ মানুষের মতো এবং নিম্নভাগ ঘোড়ার মতো।
- ভৌগোলিক অর্থ: কিছু প্রাচীন গ্রন্থে “কিম্পুরুষ” বলতে হিমালয় ও হেমকূট পর্বতমালার মধ্যবর্তী অঞ্চল এবং জাভা দ্বীপের কিছু অংশকে বোঝানো হত।
কিম্পুরুষ শব্দের ব্যুৎপত্তি
“কিম্পুরুষ” শব্দটি দুটি সংস্কৃত শব্দের সমন্বয়ে গঠিত:
- “কিম্”: যার অর্থ – কি?
- “পুরুষ”: যার অর্থ – মানুষ
অর্থাৎ “কিম্পুরুষ” শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো – “এ আবার কেমন পুরুষ!” সম্ভবত এদের অদ্ভুত রূপ দেখেই মানুষ এইরকম নামকরণ করেছিল।
কিম্পুরুষ শব্দের সমার্থক শব্দ
কিম্পুরুষ শব্দের কিছু সমার্থক শব্দ হল:
- কিন্নর
- অশ্বমুখ
- তুরঙ্গমুখ
কিম্পুরুষ শব্দের ব্যবহার
বর্তমানে “কিম্পুরুষ” শব্দটি প্রধানত পৌরাণিক প্রাণী বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি অদ্ভুতদর্শন বা বিচিত্র কোন ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বোঝাতেও ব্যবহার করা হতে পারে।
উদাহরণ:
- রামায়ণে হনুমানের লঙ্কায় যাওয়ার সময় তিনি বহু কিম্পুরুষের সাথে দেখা করেছিলেন।
- “তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন কোনো কিম্পুরুষের সাথে কথা বলছি!”
কিম্পুরুষ: রহস্যময় এক নাম
“কিম্পুরুষ” শব্দটি পৌরাণিক কাহিনী, ইতিহাস এবং ভাষা – এই তিনটি বিষয়ের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এই শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে রহস্য, কৌতূহল এবং অজানার প্রতি মানুষের চিরন্তন আকর্ষণ।