‘কামড়’! ছোট্ট এই শব্দটির কত ব্যাপ্তি, কত রকম অর্থ, কত রঙ! শুধু দাঁতের চাপ নয়, জীবনের নানান ক্ষেত্রেই ‘কামড়’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। চলুন আজ আমরা ‘কামড়’ শব্দটির অর্থ ও ব্যবহার সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জেনে নিই।
‘কামড়’ শব্দের অর্থ
‘কামড়’ মূলত একটি বিশেষ্য পদ। এর উচ্চারণ [কামোর্]। ইংরেজিতে ‘কামড়’-এর অনুবাদ হল “bite”। ‘কামড়’ শব্দটির কয়েকটি অর্থ দেখে নেওয়া যাক:
- দংশন: ‘কামড়’ শব্দের সবচেয়ে প্রচলিত অর্থ হল দংশন, যা দাঁতের চাপ বা আঘাতকে নির্দেশ করে। যেমন, “সাপের কামড়”, “কুকুরের কামড়”।
- নির্দয় দাবি/চাপ: ‘কামড়’ শব্দটি রূপক অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কোনো কিছুর নির্দয় দাবি বা চাপকেও ‘কামড়’ বলা হয়। যেমন, “মহাজনের সুদের কামড়”, “দারিদ্র্যের কামড়”।
- যন্ত্রণা: শারীরিক বা মানসিক যেকোনো যন্ত্রণা বোঝাতেও ‘কামড়’ শব্দটির প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন, “পেটের কামড়”, “হৃদয়ের কামড়”।
‘কামড়’ শব্দের ব্যবহার
শুধু ‘কামড়’ নয়, এই শব্দটি দিয়ে নানান ক্রিয়াপদ, বিশেষণও তৈরি হয়েছে। কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক:
- কামড় কাটা/দেওয়া/বসানো/মারা (ক্রিয়া): দাঁত দিয়ে দংশন করাকে বোঝায়। যেমন, “সাপটি তাকে কামড় দিয়েছে”, “কুকুরটি তার পায়ে কামড় বসিয়েছে”।
- কামড়াকামড়ি (বিশেষ্য): পরস্পর দংশন বা মারামারিকে বোঝায়। যেমন, “দুই ভাইয়ের মধ্যে কামড়াকামড়ি লেগে গেল”।
- কামড়ানো/কামড়ান (ক্রিয়া): দংশন করা, দাবি করা, যন্ত্রণা পাওয়া, সজোরে চেপে ধরা, দৃঢ়সঙ্কল্প হওয়া ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, “কুকুরটি তাকে কামড়াতে এসেছিল”, “ছেলেটি ভিটেমাটি কামড়ে আছে”, “আমার পেট কামড়াচ্ছে”।
- কামড়ানি/কামড়ি (বিশেষ্য): যন্ত্রণা, শূল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন, “তার পেটে কামড়ানি হচ্ছে”।
- কামড়ে ধরা/কামড়াইয়া ধরা (ক্রিয়া): দাঁতে কামড় দিয়ে ধরা, আঠার মতো চেপে ধরাকে বোঝায়। যেমন, “কুকুরটি হাড়টি কামড়ে ধরে আছে”।
- তেলকামড়া (বিশেষণ): কাপড়ে তেলের মতো লেগে থাকে এমন, সহজে ছাড়তে চায় না এমন।
- বিষপিঁপড়ার কামড়: গা জ্বালাকর যন্ত্রণাদায়ক আক্রমণ।
- মরণ কামড়: যে কামড়ের ফল মৃত্যু, চরম সর্বনাশকর আক্রমণ।
- হাত কামড়ানি: ক্ষোভ, মনস্তাপ, আফসোস।
- ঘা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে: যে ব্যথা পেয়েছে, তার উপর আবারো আঘাত করা
‘কামড়’ শব্দ ব্যবহার করে কিছু প্রবাদ-প্রবচন
দেখা যাচ্ছে, ‘কামড়’ শব্দটি শুধু দৈনন্দিন জীবনেই নয়, বাংলা সাহিত্যেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের আবেগ, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আরও সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায়।