সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার পর তার প্রথম পরিচয় হয় তার নাম দিয়ে। একটি সুন্দর, অর্থবহ নাম শুধু ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে না, বরং তার ব্যক্তিত্ব গঠন ও ভবিষ্যতের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। ইসলাম ধর্মে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রাখার ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ নাম শুধু ডাকনাম নয়, এটি পরিচয়ের পাশাপাশি তার জন্য দোয়া স্বরূপও বটে।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সুন্দর নাম রাখতে উৎসাহিত করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে:
“কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখো।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং – ৪৯৩০)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নাম রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। পিতা-মাতার উচিত সন্তানের জন্য এমন নাম নির্বাচন করা যা অর্থবহ এবং ইসলামিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তেমনি একটি অত্যন্ত সুন্দর ও তাৎপর্যপূর্ণ ইসলামিক নাম হলো ‘ফাতিহা’।
ফাতিহা নামের অর্থ
ফাতিহা একটি আরবি ভাষার শব্দ এবং মুসলিম বিশ্বে এটি অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি নাম, বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের জন্য। এই নামের একাধিক সুন্দর অর্থ রয়েছে:
- মূল আভিধানিক অর্থ: ফাতিহা শব্দের মূল অর্থ হলো “সূচনা”, “প্রারম্ভ”, “উদ্বোধন” বা “মুখবন্ধ”। কোনো কিছুর শুরু বা আরম্ভকে ফাতিহা বোঝানো হয়।
- কুরআনুল কারীমের সংযোগ: ‘ফাতিহা’ নামটি পবিত্র কুরআনুল কারীমের প্রথম সূরার নাম – সূরা আল-ফাতিহা। এই সূরাটি কুরআনের সূচনা, এর মূল ভিত্তি এবং এটি “উম্মুল কুরআন” বা “কুরআনের জননী” নামেও পরিচিত। সূরা ফাতিহা প্রতিটি সালাতে পাঠ করা বাধ্যতামূলক এবং এর মধ্যে আল্লাহ তায়ালার অসীম প্রশংসা, প্রার্থনা ও হেদায়েতের পথ রয়েছে। এই সূরার নামের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় ফাতিহা নামটি মুসলিম সমাজে অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
- প্রচলিত বা ভাবার্থমূলক অর্থ: নামের সুন্দর অর্থের পাশাপাশি, অনেক ক্ষেত্রে নামের দ্বারা ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বা আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ পায়। বাংলা ও ইংরেজিতে ফাতিহা নামের যে অর্থটি প্রচলিত রয়েছে, তা হয়তো এই নামের বরকত বা প্রভাব থেকে আসা একটি ভাবার্থ:
- ফাতিহা নামের বাংলা অর্থ: হৃদয় জয়কারী বা হৃদয় জয় করে এমন। (সঙ্গে হৃদয় জয়)
- ফাতিহা নামের ইংরেজি অর্থ: Wins of hearts বা Conqueror of hearts। (Wins of hearts with)
এই অর্থগুলো নামের আভিধানিক অর্থের পাশাপাশি ব্যক্তির মাঝে কাঙ্ক্ষিত ইতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত বহন করে। যেমন সূরা ফাতিহার বরকতে আল্লাহ মুমিনদের হৃদয় খুলে দেন, হেদায়েতের পথ দেখান, তেমনই ফাতিহা নামের অধিকারী ব্যক্তিও হয়তো তার মাধুর্য বা গুণের দ্বারা মানুষের মন জয় করতে পারেন।
ফাতিহা নামের বানান
বিভিন্ন ভাষায় ফাতিহা নামটি যেভাবে লেখা হয়:
- ইংরেজি বানান: Fatiha
- আরবি বানান: فتيحة
ইংরেজি বানানে সাধারণত ৬টি অক্ষর থাকে।
কেন ফাতিহা নামটি আপনার মেয়ের জন্য উপযুক্ত?
আপনার নতুন অতিথির জন্য ফাতিহা নামটি কয়েকটি কারণে একটি চমৎকার পছন্দ হতে পারে:
- ইসলামিক তাৎপর্য: পবিত্র কুরআনের প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূরার নামে নাম রাখলে তা নিঃসন্দেহে সন্তানের জন্য বরকতময় হবে। এটি তার জীবনে দ্বীনের সংযোগ স্থাপন করতে সহায়ক হতে পারে।
- অর্থপূর্ণতা: “সূচনা” বা “প্রারম্ভ” অর্থটি জীবনের নতুন শুরুর প্রতীক। আর “হৃদয় জয়কারী” অর্থটি মানুষের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং ভালোবাসা অর্জনের ইঙ্গিত দেয়।
- শ্রবণমধুরতা ও জনপ্রিয়তা: নামটি শুনতে খুবই সুন্দর এবং মুসলিম বিশ্বে এটি একটি জনপ্রিয় ও পরিচিত নাম।
- ইতিবাচক প্রভাব: সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা সন্তানের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে বিশ্বাস করা হয়।
সন্তানের নাম রাখা পিতা-মাতার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। অর্থহীন বা বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে নাম না রেখে সুন্দর, ইসলামিক ও অর্থপূর্ণ নাম রাখাই শ্রেয়। ফাতিহা নামটি তেমনই একটি সুন্দর এবং গভীর ইসলামিক তাৎপর্য বহনকারী নাম যা আপনার মেয়ে সন্তানের জন্য বিবেচনা করতে পারেন।