পৃথিবীতে সন্তানের আগমন প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্য এক অমূল্য উপহার। আর এই নতুন অতিথির জন্য একটি সুন্দর, অর্থবহ এবং ইসলামিক নাম রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। ইসলামে নামের গুরুত্ব অপরিসীম। নাম শুধু একটি পরিচিতিই নয়, বরং এটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। এক হাদিসে তিনি বলেছেন: “কিয়ামতের দিন তোমাদের নিজ নাম ও পিতার নামে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখো।” (আবু দাউদ)
নাম রাখার এই গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা আজ বাররাহ (Barrah – براح) নামটি নিয়ে আলোচনা করব। এটি একটি সুন্দর আরবি নাম এবং এর একটি বিশেষ ইসলামিক প্রেক্ষাপট রয়েছে।
বাররাহ নামের অর্থ কী?
বাররাহ নামটি আরবি ‘বিরর’ (بر) শব্দ থেকে এসেছে, যার মূল অর্থ হলো নেকি, আনুগত্য, পুণ্য বা আল্লাহভীরুতা। এই অনুযায়ী বাররাহ নামের বাংলা ও আরবি অর্থ দাঁড়ায়:
- বাংলা অর্থ: নেককার, পুণ্যবতী, আল্লাহভীরু, অনুগতা, ধার্মিক।
- আরবি অর্থ: برة (বাররাহ) – পুণ্যবতী, ধার্মিকা।
- ইংরেজি অর্থ: Pious, Devout, Dutiful, Righteous.
উল্লেখ্য, মূল আরবি বাররাহ (برة) একটি স্ত্রীবাচক শব্দ, তাই এটি কন্যা সন্তানের নাম হিসেবেই উপযুক্ত।
বাররাহ নামের ইসলামিক তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বাররাহ নামটি শুধুমাত্র এর সুন্দর অর্থের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর একটি উল্লেখযোগ্য ইসলামিক ইতিহাসও রয়েছে। বাররাহ (برة) নামের অর্থ ‘পুণ্যবতী’ বা ‘নেককার’ হওয়ায় কিছু সাহাবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এর নাম originally বাররাহ ছিল। তবে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই নামটি পছন্দ করেননি এবং কয়েকজন সাহাবিয়ার নাম পরিবর্তন করে দেন।
এর কারণ ছিল, এই নামটি দ্বারা ব্যক্তির চূড়ান্ত ধার্মিকতার দাবি করা হয়, যা একমাত্র আল্লাহই জানেন। অন্যকে বা নিজেকে এমন নামে ডাকা, যাতে নিজের পবিত্রতা বা পুণ্যবত্তার দাবি করা হয়, ইসলামে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বিনয় পছন্দ করতেন এবং এমন নাম রাখতে উৎসাহিত করতেন যা আল্লাহর দাসত্ব বা অন্য কোনো সুন্দর অর্থ প্রকাশ করে, যা অহংকারমুক্ত।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু হাদিস থেকে জানা যায় যে, উম্মুল মুমিনীন জুওয়ায়রিয়াহ বিনতে আল-হারিথ (রা.) এবং উম্মুল মুমিনীন যয়নাব বিনতে জাহাশ (রা.)-এর মূল নাম বাররাহ ছিল, যা পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিবর্তন করে দেন। তিনি (সা.) বলেন, “তোমরা নিজেদেরকে বাররাহ (পুণ্যবতী) বলো না। কারণ আল্লাহই জানেন কে নেককার।” (সহীহ মুসলিম)
এরপর তিনি তাদের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে জুওয়ায়রিয়াহ এবং যয়নাব রাখেন। এই প্রেক্ষাপট থেকে বোঝা যায় যে, যদিও বাররাহ নামের অর্থ খুব সুন্দর, তবুও কিছু বিশেষ কারণে (আত্মপ্রশংসা থেকে বাঁচতে) রাসূলুল্লাহ (সা.) এই নামটি পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে বাররাহ নামটি রাখা কি উচিত?
যদিও নামটি ঐতিহাসিকভাবে পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এসেছে, আধুনিক ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে এই বিষয়ে ভিন্নমত দেখা যায়। কেউ কেউ মনে করেন যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা.) নামটি পরিবর্তন করতে বলেছিলেন, তাই এই নামটি রাখা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। আবার কেউ কেউ বলেন যে, যেহেতু পরিবর্তনের কারণটি ছিল ‘নিজে নিজেকে পুণ্যবতী দাবি করা’ থেকে বিরত থাকা, তাই যদি অন্য কেউ স্নেহের বশে এই নাম রাখে এবং এর সুন্দর অর্থকে সম্মান করে, তবে এটি জায়েজ হতে পারে। তবে সাধারণ প্রবণতা হলো বিতর্কিত বা রাসূল (সা.) কর্তৃক পরিবর্তিত নাম রাখা থেকে বিরত থাকা এবং অন্য সুন্দর ও অর্থবহ ইসলামিক নাম বেছে নেওয়া।
বাররাহ নামের বানান
- ইংরেজি বানান: Barrah
- আরবি বানান: براح (উচ্চারণ: বাররাহ)
নাম শুধুমাত্র পরিচয়ের মাধ্যম নয়, এটি সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের প্রথম উপহার। তাই সুন্দর, অর্থবহ এবং ইসলামিক আদব অনুযায়ী নাম নির্বাচন করা পিতা-মাতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বাররাহ নামের সুন্দর অর্থ থাকলেও এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নামকরণ করার আগে ভালোভাবে ভেবে নেওয়া উচিত।