“কড়কড়” – শব্দটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে বজ্রপাতের দৃশ্য কিংবা শুকনো পাতার খসখস শব্দ। কিন্তু জানেন কি, বাংলা ভাষায় এই ছোট্ট শব্দটি কত রকম অর্থ ও প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের ভাব প্রকাশে সমৃদ্ধ করে? চলুন, আজ আমরা “কড়কড়” শব্দটির রহস্য উন্মোচন করি।
কড়কড় শব্দের অর্থ কি?
“কড়কড়” মূলত একটি ধ্বন্যাত্মক শব্দ। এর অর্থ প্রয়োগ অনুসারে ভিন্ন হতে পারে।
১. প্রকৃতির গর্জন
বজ্রপাতের সাথে “কড়কড়” শব্দের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত যেমন লিখেছেন, “কড়কড় করে বজ্র পড়িল ভূ-তলে”। এখানে, “কড়কড়” বজ্রপাতের তীব্র শব্দকে বোঝাচ্ছে।
২. শুষ্কতা ও স্পর্শ
শুকনো পাতার খসখস শব্দ, কাঠের টুকরোর ভাঙার শব্দ – এই সব ক্ষেত্রেও “কড়কড়” শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সুকুমার রায় তার এক গল্পে লিখেছেন, “মাঞ্জাটা কিন্তু ভারি অদ্ভুত-কই, তেমন কড়কড় করছে না তো”। এখানে, “কড়কড়” শব্দটি দিয়ে মাটির তৈরি মাঞ্জার শুষ্কতা এবং কঠিন অবস্থা বোঝানো হয়েছে।
কড়কড় শব্দের সমার্থক শব্দ
- খড়খড়
- খটখট
- কড়্কড়্
- ঝনঝন
কড়কড় শব্দের ব্যবহার
কড়কড় শব্দটি বিভিন্নভাবে আমাদের ভাষায় ব্যবহৃত হয়:
- বিশেষ্য রূপে: “আকাশে কড়কড় শুনে ভয় পেয়ে গেলাম।”
- অব্যয় রূপে: “পুরনো দরজা খুলে কড়কড় শব্দ হলো।”
কড়কড় শব্দ সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য
- পদের নাম: বিশেষ্য ও অব্যয়
- বাংলা উচ্চারণ: kôrkôr
- ইংরেজি অর্থ: rumble, crackle, clatter
- প্রবাদ-প্রবচন: “যারা কড়কড় করে, তারাই সব সময় বজ্রপাত ঘটায় না”।(যারা বেশি বড় বড় কথা বলে, তারা সবসময় তার মতো কাজ করে না)।
পরিশেষে বলা যায়, “কড়কড়” শুধুই একটি শব্দ নয়, বরং এটি আমাদের ভাষার একটি অনন্য সৌন্দর্য। এই ছোট্ট শব্দটি প্রকৃতির রূঢ়তা, মানুষের আবেগ এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট ঘটনার একটি জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে।