‘কাঙাল’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে দরিদ্র, অসহায় মানুষের ছবি। কিন্তু শুধু কি দারিদ্র্যই ‘কাঙাল’ শব্দটির একমাত্র অর্থ? আসলে ‘কাঙাল’ শব্দটির ব্যবহার বহুবিধ। ভাবার্থের তারতম্যে ‘কাঙাল’ শব্দটি দিয়ে দারিদ্র্য, লোভ, আকুতি, অক্ষমতা ইত্যাদি নানান ভাব প্রকাশ করা হয়।
কাঙাল শব্দের অর্থ
‘কাঙাল’ একটি বিশেষণ পদ। এর বাংলা উচ্চারণ “কাঙাল”। ইংরেজিতে ‘কাঙাল’ শব্দটি “Poor” বা “Destitute” হিসেবে অনুবাদ করা যায়। ‘কাঙাল’ শব্দের অর্থ:
- নিঃস্ব: যার কিছুই নেই, একেবারে গরিব।
- যেমন: “লুটি বাঙালার লোকে করিল কাঙাল”।(ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর)
- লোভী: যার লোভের অন্য কোনো শেষ নেই।
- যেমন: “এসেছি কি হেথা যশোর কাঙালি”।(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
- দুঃখী: যার মন খুব খারাপ, যার কোনো আনন্দ নেই।
- অক্ষম: যে কোনো কাজ করতে অক্ষম।
- যেমন: “যৌবনে অন্যায় ব্যয়ে বয়সে কাঙালী”।(মাইকেল মধুসূদন দত্ত)
‘কাঙাল’ শব্দটি বিশেষ্য পদ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিশেষ্য পদ হিসেবে ‘কাঙাল’ বলতে বোঝায় ভিক্ষুক।
- যেমন: “তাই আমি কাঙালের মতো”।(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঙাল শব্দের সমার্থক শব্দ
‘কাঙাল’ শব্দের কিছু সমার্থক শব্দ হল:
- গরিব
- দরিদ্র
- নিঃস্ব
- অভাবী
- অর্থহীন
- কপর্দকশূন্য
- লোভী
- লোলুপ
- আকাঙ্ক্ষী
- অভিলাষী
কাঙাল শব্দটির সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রবাদ-প্রবচন
- কাঙালের ঘরে ধন এলে কুঁড়ে থেকে ওঠে অট্টালিকা।
- কাঙালের মা মরে ডাক্তারের আফসোস।
- কাঙালের বউ কুটনী, ধনী পুরুষ চায়।
‘কাঙাল’ শব্দ দিয়ে গঠিত হয় ‘কাঙালখানা’, ‘কাঙালপনা’ ইত্যাদি শব্দ। ‘কাঙালখানা’ বলতে অনাথাশ্রম বোঝায়। আর ‘কাঙালপনা’ শব্দটি দিয়ে দরিদ্রের মতো আচরণ, অতিশয় লোভ বা লোলুপতা ইত্যাদি বোঝায়।
‘কাঙাল’ শব্দটির ব্যবহার বাংলা সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে বহু প্রাচীন কাল থেকে। একটি সাধারণ শব্দ হলেও ‘কাঙাল’ শব্দটি মানুষের নানান অবস্থা, আবেগ, আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।