‘কলমের কালি চিরস্থায়ী’ বলা হলেও, কলমের কারুকার্য সব সময় প্রশংসার যোগ্য হয় না। বিশেষ করে যখন হাতের লেখা অস্পষ্ট ও অপঠনযোগ্য হয়, তখন তাকে ‘কদক্ষর’ বলে অভিহিত করা হয়। শব্দটির একটি নেতিবাচক ভাবার্থ রয়েছে যা অশোভন লেখা, অপমানজনক ভাষা, এমনকি নীচ মানসিকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। আজ আমরা ‘কদক্ষর’ শব্দটির অর্থ, ব্যবহার, এবং এর সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
‘কদক্ষর’ শব্দের অর্থ
‘কদক্ষর’ একটি সংস্কৃত উৎস থেকে আগত শব্দ। “কু” উপসর্গ এবং “অক্ষর” শব্দের মিশ্রণে এই শব্দটি গঠিত। “কু” উপসর্গটির অর্থ “মন্দ” বা “খারাপ”, এবং “অক্ষর” অর্থ “বর্ণ” বা “লেখা”। অর্থাৎ, “কদক্ষর” শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল “মন্দ লেখা”।
‘কদক্ষর’ শব্দের ব্যবহার
‘কদক্ষর’ শব্দটি বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হতে পারে:
- বিশেষ্য হিসেবে: যখন কারও হাতের লেখা অস্পষ্ট ও অপঠনযোগ্য হয়, তখন তাকে “কদক্ষর” বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ: “তার কদক্ষরের কারণে পরীক্ষার খাতায় নম্বর পেতে অনেক কষ্ট হয়েছিল।”
- বিশেষণ হিসেবে: ‘কদক্ষর’ যে ব্যক্তির হাতের লেখা অস্পষ্ট, তাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: “সে একজন কদক্ষর লেখক, তার লেখা কেউ বুঝতে পারে না।”
- রূপক অর্থে: শুধু হাতের লেখা নয়, ‘কদক্ষর’ শব্দটি কোনো কুৎসিত কাজ, বক্তব্য, বা চিন্তাধারাকে বোঝাতে ও ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: “রাজনীতিতে অনেক সময় কদক্ষর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।”
‘কদক্ষর’ শব্দের সমার্থক শব্দ
‘কদক্ষর’ শব্দের কিছু সমার্থক শব্দ হলো:
- কুলেখা
- দুর্লেখ
- অস্পষ্ট লেখা
- অপঠনযোগ্য লেখা
- কুবাক্য
- কটুক্তি
‘কদক্ষর’ শব্দ সম্পর্কিত কিছু প্রবাদ-প্রবচন
বাংলা ভাষায় ‘কদক্ষর’ শব্দ সম্পর্কিত কোনও প্রবাদ-প্রবচন প্রচলিত নেই। তবে, সুন্দর এবং স্পষ্ট হাতের লেখার গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন প্রবাদ রয়েছে, যেমন: “হাতের লেখা মানুষের ভূষণ।”
উপসংহার
‘কদক্ষর’ শব্দটি যুগযুগ ধরে বাংলা ভাষার একটি অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শব্দটি শুধু হাতের লেখার অস্পষ্টতাকেই বোঝায় না, বরং মানুষের মনের অস্পষ্টতা, কুটিলতা, এবং নীচ মানসিকতার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে।