‘কঞ্জ’! শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুকুরে ফুটে থাকা লাল টুকটুকে শাপলা পদ্মের ছবি। অথবা মনে পড়ে যায় কবিগুরুর সেই অমর সৃষ্টি “আজি প্রাতে তোমার পত্র-পত্রে/কোথা হতে আসে অমৃত ঝরে।” কিন্তু জানেন কি, পদ্ম ছাড়াও ‘কঞ্জ’ শব্দটি আরও অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। চলুন, আজ আমরা জেনে নেই বাংলা ভাষার এই সুন্দর শব্দটির অর্থ ও ব্যবহার সম্পর্কে।
কঞ্জ শব্দের অর্থ
‘কঞ্জ’ একটি সংস্কৃত শব্দ। বাংলায় এটি বিশেষ্য ও বিশেষণ উভয় রূপেই ব্যবহৃত হয়।
বিশেষ্য রূপে কঞ্জ
- কমলঃ ‘কঞ্জ’ শব্দের সবচেয়ে পরিচিত অর্থ হলো কমল। যেমন: “কঞ্জনয়নী খঞ্জন গতিহারী” – এখানে ‘কঞ্জনয়নী’ বলা হয়েছে পদ্মফুলের মতো চোখের অধিকারিণী নারীকে।
- চুল, চিকুর, কেশঃ ‘কঞ্জ’ শব্দটি চুল, চিকুর অথবা কেশ বোঝাতেও ব্যবহৃত হতে পারে।
- অমৃতঃ ‘কঞ্জ’ শব্দটি কখনো কখনো অমৃত বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়।
বিশেষণ রূপে কঞ্জ
‘কঞ্জ’ শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ‘জলে জন্মে এমন’ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: কঞ্জপদ্ম (জলে জন্মানো পদ্ম)।
কঞ্জ শব্দের সমার্থক শব্দ
কঞ্জ শব্দের কিছু সমার্থক শব্দ হল:
- পদ্ম
- সরোজ
- অরবিন্দ
- পুষ্পরাজ
- জলজ
- পঙ্কজ
কঞ্জ শব্দের ব্যবহার
‘কঞ্জ’ শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। কিছু উদাহরণ দেওয়া হল:
- কবিতায়: “কালরাত্রি কঞ্জমুখী কত জান কলা” – এখানে ‘কঞ্জমুখী’ ব্যবহৃত হয়েছে পদ্মফুলের মতো মুখের অধিকারিণী অর্থে।
- গানে: “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।/চির সবুজ এই বাংলা, তোমার কঞ্জ জলে ভেসে যাব আমি।” – এখানে ‘কঞ্জ জল’ বলা হয়েছে পদ্মফুলের জলাশয় অর্থাৎ বাংলার নদী-নালা, পুকুর-ডোবাকে।
- সাহিত্যে: “রাজার কন্যার চুলগুলো কঞ্জ-লতার মতো লম্বা ছিল।” – এখানে ‘কঞ্জ-লতা’ ব্যবহৃত হয়েছে চুলের সৌন্দর্য বর্ণনা করার জন্য।
কিছু প্রবাদ-প্রবচন:
- কাদা থেকে কঞ্জঃ এই প্রবাদটি দিয়ে বোঝানো হয় যে প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকেও ভালো কিছু আসতে পারে।
- কঞ্জ ফোটেনি ডোবে থাকিতেঃ এই প্রবাদটি দিয়ে বোঝানো হয় যে যারা সুযোগ পায়না, তারাই অনেক্ষ্ষেত্রে অজানা থেকে যায়।
এভাবেই ‘কঞ্জ’ শব্দটি বাংলা ভাষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই শব্দটি আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।