“কেয়াপাতা” শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট্ট নৌকার ছবি, যে নৌকা তৈরি হয়েছে কেয়া পাতায়, আর ভেসে যাচ্ছে নীল জলরাশিতে। কিন্তু জানেন কি, “কেয়াপাতা” শব্দটির আরও একটি অর্থ রয়েছে, যা আমাদের অতীত ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে।
কেয়াপাতা শব্দের অর্থ কি?
“কেয়াপাতা” শব্দটির দুটি প্রচলিত অর্থ রয়েছে:
- কেয়া গাছের পাতা: সাধারণত এই অর্থেই “কেয়াপাতা” শব্দটি ব্যবহৃত হয়। গ্রামবাংলার পরিচিত চিত্র, শিশুরা কেয়া পাতা দিয়ে নৌকা বানিয়ে খেলা করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতায় লিখেছেন, “কেয়া পাতায় নৌকা গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে”।
- প্রাচীনকালে স্ত্রীলোকদের ব্যবহৃত একধরনের গলার অলঙ্কার: এই অর্থটি বর্তমানে বেশ অপ্রচলিত। “কেয়াপাতা গলায় গরব করে অতি-ঘনরাম চক্রবর্তী” – এই ধরণের বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে অতীতে এই অর্থটি প্রচলিত ছিল বলে ধারণা করা যায়।
কেয়াপাতা শব্দের ব্যুৎপত্তি
“কেয়াপাতা” শব্দটি সংস্কৃত “কেতকপত্র” শব্দ থেকে এসেছে।
- কেতক > কেয়া
- পত্র > পাতা
অর্থাৎ, কেয়া গাছের পাতা হচ্ছে “কেয়াপাতা”।
কেয়াপাতা শব্দের সমার্থক শব্দ
- কেয়ার পাতা
- স্ক্রু পাইন
- পানিফল
কেয়াপাতা শব্দের ব্যবহার
“কেয়াপাতা” শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়:
- সাহিত্যে: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ বিশিষ্ট সাহিত্যিক তাঁদের রচনায় “কেয়াপাতা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
- দৈনন্দিন জীবনে: গ্রামবাংলায় শিশুরা “কেয়াপাতা” দিয়ে নৌকা তৈরি করে খেলাধুলা করে।
- অলঙ্কারের নাম হিসেবে: যদিও বর্তমানে অপ্রচলিত, তবুও প্রাচীন গ্রন্থে “কেয়াপাতা” শব্দটি একধরনের গলার অলঙ্কার বোঝাতে ব্যবহৃত হত।
“কেয়াপাতা” শব্দটি শুধু একটি শব্দ নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। এই শব্দটির মাধ্যমে আমরা আমাদের অতীতের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করি।