‘কুঙ্কুম’ – শব্দটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে রক্তিম রঙ আর মিষ্টি সুগন্ধের কথা। কিন্তু শুধু কি রঙ কিংবা সুগন্ধ, ‘কুঙ্কুম’ শব্দটি আরও অনেক ভাব ও আবেগের ইঙ্গিত বহন করে। আসুন আজ আমরা জেনে নিই ‘কুঙ্কুম’ শব্দটির গভীরে লুকিয়ে থাকা নানান তথ্য।
কুঙ্কুম শব্দের অর্থ কি?
‘কুঙ্কুম’ একটি সংস্কৃত শব্দ যার উৎপত্তি ‘√কুন্ক্+উম’ থেকে। বাংলা ভাষায় ‘কুঙ্কুম’ শব্দটি বিশেষ্য পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এর বেশ কয়েকটি অর্থ রয়েছে:
- জাফরান: এটিই ‘কুঙ্কুম’ শব্দটির সর্বাধিক পরিচিত অর্থ। জাফরান হলো কাস্মীরে জাত এক প্রকার সুগন্ধী ফুলের কেশর যা রান্না, ঔষধ তৈরি এবং রঙ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- কুসুম ফুল: এটি একপ্রকার লাল রঙের ফুল যা থেকে লাল রঙ তৈরি করা হয়।
- ফুল: কখনো কখনো ‘কুঙ্কুম’ শব্দটি সাধারণ ভাবে ‘ফুল’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, “ভরেছে যে হার্ষে আকাশ গো তারারি কুঙ্কুম দিয়ে” ( সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)। এখানে ‘কুঙ্কুম’ দিয়ে ‘তারা’ কে বোঝানো হয়েছে।
কুঙ্কুম শব্দের উচ্চারণ:
‘কুঙ্কুম’ শব্দটির সঠিক উচ্চারণ হল “কুঁন-কুম”।
কুঙ্কুম শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ:
‘কুঙ্কুম’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল “Saffron”।
কুঙ্কুম শব্দের সমার্থক শব্দ:
‘কুঙ্কুম’ শব্দের কিছু সমার্থক শব্দ হল:
- জাফরান
- কেশর
- আগুরু
- কুসুম
- রক্তচন্দন
কুঙ্কুম শব্দের ব্যবহার:
‘কুঙ্কুম’ শব্দটি বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রসঙ্গে এই শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়:
- রান্না: বাঙালি রান্নায় ‘কুঙ্কুম’ একটি অপরিহার্য উপাদান। বিরিয়ানি, পোলাও, মিষ্টি ইত্যাদিতে স্বাদ ও রঙ বৃদ্ধির জন্য ‘কুঙ্কুম’ ব্যবহার করা হয়।
- ঔষধ: আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ‘কুঙ্কুম’ একটি গুণকর ঔষধ হিসেবে বিবেচিত। হজমের সমস্যা, ঠান্ডা লাগা, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ‘কুঙ্কুম’ ব্যবহৃত হয়।
- রঙ: ‘কুঙ্কুম’ থেকে লাল রঙ তৈরি করা হয় যা পোশাক, খাবার ইত্যাদি রঙ করতে ব্যবহৃত হয়।
- ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান: হিন্দু ধর্মে ‘কুঙ্কুম’ একটি পবিত্র বস্তু হিসেবে বিবেচিত। পূজা-অর্চনা, বিবাহ ইত্যাদি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ‘কুঙ্কুম’ ব্যবহার করা হয়।
- সাহিত্য: বাংলা সাহিত্যে ‘কুঙ্কুম’ শব্দটি প্রায়শই ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে প্রেম, স্নেহ, আবেগ ইত্যাদি প্রকাশ করতে ‘কুঙ্কুম’ শব্দটির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
‘কুঙ্কুম’ শব্দটির সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রবাদ-প্রবচন ও রয়েছে যেমন:
- ঘরে ঘরে কুঙ্কুম মাখা
- কুঙ্কুম মাখলেই বউ হয় না
এই প্রবাদ-প্রবচনগুলো থেকে আমরা ‘কুঙ্কুম’ শব্দটির সাথে জড়িত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ‘কুঙ্কুম’ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।