মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষার ধারক ও বাহক হিসেবে আমাদের প্রাচীন সাহিত্যের ভাণ্ডার অনুসন্ধান করলে এমন অনেক শব্দের সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলোর অনেকগুলোই বর্তমানে অপ্রচলিত। আজ আমরা এমনই একটি শব্দ “কাচ” নিয়ে আলোচনা করব। “কাচ” শব্দটির ব্যবহার বর্তমানে আমরা “transparency” বা “glass” এই অর্থে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু মধ্যযুগে এই শব্দটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হত।
কাচ শব্দের অর্থ
মধ্যযুগীয় বাংলায় “কাচ” শব্দটি বিশেষ্য পদ হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং এর অর্থ ছিল:
- ছল; লীলাখেলা
- অভিনয়; ক্রীড়া-কৌতুক; নাচ-তামাসা
- বাতিক; বাই (বুড়া বয়সে বেড়ে কাচ-প্রবাদ)।
শব্দের উৎপত্তি
মনে করা হয়, “কাচ” শব্দটি সংস্কৃত “কার্য” শব্দ থেকে উদ্ভূত। “কার্য” থেকে প্রাকৃত ভাষায় হয়েছে “কজ্জ”, তারপর “কচ্চ” এবং অবশেষে বাংলায় “কাচ”।
কাচ শব্দের সমার্থক শব্দ
- ছলনা
- প্রতারণা
- লীলা
- খেলা
- অভিনয়
- কৌতুক
- তামাশা
- বাতিক
- খামখেয়ালি
কাচ শব্দের ব্যবহার
মধ্যযুগীয় সাহিত্যে “কাচ” শব্দটি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হল:
- “তোমার কাছে আমি হেরিয়া গেলাম, তুমি তো আমার কাছে এত কাচ করিলে কেন?” (চণ্ডীমঙ্গল, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী)
- “বৃদ্ধ বয়সে তাহার অনেক কাচ বেড়েছে।”
বর্তমানে শব্দটির অপ্রচলন
কালের বিবর্তনে ভাষার ও পরিবর্তন হয়। মধ্যযুগে যেসব শব্দ প্রচলিত ছিল তার অনেকগুলোই বর্তমানে অপ্রচলিত। “কাচ” শব্দটির ক্ষেত্রেও তেমনটিই হয়েছে। বর্তমানে আমরা এই অর্থ বোঝাতে “ছলনা”, “প্রতারণা”, “খেলা” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে থাকি।
পরিশেষে বলা যায় যে, “কাচ” শব্দটি মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ধরনের শব্দের অর্থ ও ব্যবহার জানার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাষার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও বেশি জ্ঞান লাভ করতে পারি।