কাঙ্গুরা! শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রাচীন বাংলার মন্দির, মসজিদ, দুর্গ, রাজপ্রাসাদের চিত্র। স্থাপত্য শিল্পে অনন্য এই উপাদানটি শুধু সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, এর সাথে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের নানান কাহিনী। আজ আমরা জানবো ‘কাঙ্গুরা’ শব্দটির অর্থ, ব্যবহার এবং এর সাথে সম্পর্কিত নানান তথ্য।
কাঙ্গুরা শব্দের অর্থ কি?
বাংলায় ‘কাঙ্গুরা’ শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। সাধারণত এর দ্বারা বুঝায়:
- প্রাসাদ, মন্দির, মসজিদ, দুর্গ ইত্যাদি স্থাপনার ছাদের কিনারায় সারিবদ্ধভাবে অবস্থিত ছোট ছোট ত্রিকোণাকার অংশ।
- দুর্গের প্রাচীরের উপরের দিকে নির্মিত উঁচু স্থান, যেখান থেকে সৈনিকরা যুদ্ধ করত।
- স্থাপত্যের ভাষায়, ‘cornice’ – কে বাংলায় কাঙ্গুরা বলা হয়।
কাঙ্গুরা শব্দের উৎস
‘কাঙ্গুরা’ শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ফারসিতে ‘কুন্গুরহ্’ শব্দের অর্থ দাঁত। স্থাপত্য শিল্পে কাঙ্গুরার সারিবদ্ধ সজ্জা দেখতে অনেকটা দাঁতের মতো বলেই হয়তো এরূপ নামকরণ।
কাঙ্গুরা শব্দের সমার্থক শব্দ
কাঙ্গুরার কোনো সরাসরি সমার্থক শব্দ না থাকলেও, প্রাসঙ্গিক অর্থে ‘বুরুজ’, ‘কর্ণিশ’, ‘প্রাকার’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়।
কাঙ্গুরা শব্দের ব্যবহার
প্রাচীন বাংলার সাহিত্যে ‘কাঙ্গুরা’ শব্দের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ:
- “কোঠায় কাঙ্গুরা ঘড়ি নিশান নহবৎ” – ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর
- “পাথরের জড় পাথরের গড় কঙ্গুরা পুরট শোভা” – কবি কঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
- “সুবর্ণ গড়ের জত কাঙ্গুরা অদ্ভুত” – সৈয়দ আলাওল
এছাড়াও, আধুনিক সাহিত্য, কবিতা, গানেও ‘কাঙ্গুরা’ শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
উপসংহার
‘কাঙ্গুরা’ শব্দটি শুধু একটি স্থাপত্যিক উপাদানের নাম নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য, ঐতিহ্য ও স্থাপত্য শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক এই শব্দটি আমাদের অতীতের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে।