বাংলা ভাষা শব্দার্থের সমুদ্র। প্রতিটি শব্দের পিছনে লুকিয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং গল্প। এমনই একটি অনন্য শব্দ “কপোতাক্ষ”। এই নামটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে যশোরের সেই বিখ্যাত নদীর চিত্র, যার জলে স্নান করেছিলেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কিন্তু “কপোতাক্ষ” শুধুই কি একটি নাম? এর পেছনে কি লুকিয়ে আছে অন্য কোন অর্থ?
কপোতাক্ষ শব্দের অর্থ কি?
“কপোতাক্ষ” শব্দটি দুটি পৃথক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত: “কপোত” এবং “অক্ষ”। “কপোত” মানে হচ্ছে পায়রা এবং “অক্ষ” মানে চোখ। অর্থাৎ, “কপোতাক্ষ” শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “পায়রার চোখের মতো”।
কেন পায়রার চোখ?
পায়রার চোখ হয় অত্যন্ত সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। তার উপর পায়রার চোখের রঙ হয় লালচে ধরনের যা ভালোবাসা এবং স্নেহের প্রতীক। ধারণা করা হয়, যশোরের সেই নদীটি হয়তো তার সৌন্দর্যের কারণে অথবা পানির রঙের কারণে “কপোতাক্ষ” নামে অভিহিত হয়েছিল।
কপোতাক্ষ শব্দের সমার্থক শব্দ
- কপোতনয়না
- পায়রার চোখ
- কবদাক
কপোতাক্ষ শব্দের ব্যবহার
বাংলা সাহিত্যে “কপোতাক্ষ” শব্দটি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে, কোন নারীর সুন্দর চোখের বর্ণনা দিতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ:
- “তার কপোতাক্ষ যুগল যেন দুটি কাজল কালো তারা।”
এছাড়াও, যশোর জেলার সেই বিখ্যাত নদীকে বোঝাতে “কপোতাক্ষ” শব্দটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
কপোতাক্ষ নদী সম্পর্কে কিছু তথ্য
- কপোতাক্ষ নদী বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নদী।
- এই নদীর তীরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক মহান তারকা মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
- কপোতাক্ষ নদী এখন প্রায় মৃতপ্রায়, তবে এর নাম এখনো আমাদের মনে করে দেয় অতীতের সেই গৌরবময় দিনগুলোর কথা।
পরিশেষে বলা যায়, “কপোতাক্ষ” শব্দটি শুধুই একটি শব্দ নয়, এটি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি অংশ।