অনেক সময় আমরা এমন কিছু শুনে থাকি যা আমাদের মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়। প্রবাদ-প্রবচন হলো এরকম এক ধরনের কথা যা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোকে খুব সহজ এবং সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে। “অতি অভিমানে বিয়ে হয় না” – এই প্রবাদটিও এরকম একটি মূল্যবান কথা যা আমাদের সম্পর্কের গভীরতা এবং এর ভঙ্গুরতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। চলুন, এই প্রবাদের গভীরে একটু ডুব দিয়ে এর অর্থ, ব্যাখ্যা, প্রয়োগ এবং শিক্ষা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ইংরেজি অনুবাদ
“অতি অভিমানে বিয়ে হয় না” এই প্রবাদের উপযুক্ত ইংরেজি অনুবাদ হতে পারে:
- “Excessive pride hinders marriage.”
- “Too much pride spoils a match.”
প্রবাদের অর্থ এবং ব্যাখ্যা
“অতি অভিমানে বিয়ে হয় না” – এই প্রবাদটির সরল অর্থ হলো, অতিরিক্ত অভিমান কোনো সম্পর্কের জন্য, বিশেষ করে বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য, মোটেও ভালো নয়। অভিমান এক ধরনের আবেগ যা আমাদের মনে ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং দূরত্ব তৈরি করে। সুস্থ সম্পর্কের জন্য কিছুটা অভিমান থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু যখন এই অভিমান সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন তা সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে দিতে পারে।
বিয়ের সম্পর্ক হলো দুটি মানুষের মধ্যে একটি পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধনকে মজবুত রাখতে প্রয়োজন হয় পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা, এবং সর্বোপরি, সহনশীলতা। যখন অভিমান এই সম্পর্কে প্রবেশ করে, তখন তা এই গুণগুলোকে দুর্বল করে দেয়। অতিরিক্ত অভিমানী মানুষেরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অযথা রাগ করে, ক্ষমা করতে পারে না, এবং সব সময় নিজের অবস্থানকে প্রাধান্য দিতে চায়। এই ধরনের আচরণ সম্পর্কে তিক্ততা এবং অবিশ্বাস তৈরি করে, যা একসময় সম্পর্কের অবসান ঘটাতে পারে।
প্রবাদের প্রয়োগ
এই প্রবাদটির প্রয়োগ আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই দেখতে পাই। অনেক সময় দেখা যায়, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অভিমান করে দুজন মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। হয়তো কেউ কারো সাথে ঠিকমত কথা বলেনি, অথবা কেউ কারো কোনো কাজে বা কথায় মন খারাপ করেছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে যদি অভিমানকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে তা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষ করে বিয়ের সম্পর্কে এই প্রবাদটির প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কেউ অতিরিক্ত অভিমান করে, তাহলে তা সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। একে অপরের প্রতি সহনশীল হওয়া, ক্ষমা করতে শেখা, এবং সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা – এই গুণগুলো একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য অপরিহার্য।
একটি গল্প
এক গ্রামে রহিম এবং রহিমা নামে একটি সুখী দম্পতি বাস করতো। তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসতো এবং তাদের সংসার ছিল সবার কাছে ঈর্ষণীয়। কিন্তু রহিমার একটি সমস্যা ছিল – সে খুব অভিমানী ছিল। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে সে রহিমের সাথে রাগ করে বসে থাকতো। রহিম তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করতো, কিন্তু রহিমা তার অভিমান ছাড়তে পারতো না।
একদিন রহিম কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রহিমাকে বলতে ভুলে গেল যে সে দুপুরে বাড়িতে ফিরবে না। রহিমা সারাদিন রহিমের জন্য অপেক্ষা করলো, কিন্তু সে ফিরলো না। রাতে যখন রহিম বাড়ি ফিরলো, তখন রহিমা তাকে দেখে খুব রাগ করলো। সে রহিমের সাথে কথা বললো না, খাবারও খেলো না। রহিম তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু রহিমা তাকে ক্ষমা করলো না।
এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। রহিমা তার অভিমানের কারণে রহিমের সাথে ঠিকমত কথা বলতো না। তাদের সংসারে অশান্তি নেমে এলো। একসময় রহিম আর সহ্য করতে না পেরে রহিমাকে ছেড়ে চলে গেল। রহিমা তখন বুঝতে পারলো তার ভুল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
শিক্ষা
“অতি অভিমানে বিয়ে হয় না” – এই প্রবাদ থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হলো, অতিরিক্ত অভিমান যেকোনো সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে বৈবাহিক সম্পর্কে অভিমানকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য প্রয়োজন হয় পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা, এবং সর্বোপরি, সহনশীলতা। অভিমানকে দূরে রেখে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মান প্রদর্শন করাই হলো একটি সুন্দর এবং স্থায়ী সম্পর্কের চাবিকাঠি।